আজ মঙ্গলবার, ২৩শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাইফেল ক্লাব-চানমারি গভীর রাতে ভয়ঙ্কর ছিনতাই

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
তখন গভীর রাত। মাঝে মধ্যে গাড়ির হেডলাইট জ্বলে উঠলেও চারদিক অন্ধকার। সড়কে মানুষজনতো নেইই যানবাহনও খুব কম। তবে ওই অন্ধকার রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে দল বেধে বসে থাকে ভয়ঙ্কর কয়েকজন। ওদের টার্গেট মালবাহী গাড়ি। বাগে পেলেই ক্ষিপ্র গতিতে চলন্ত গাড়ি থেকে ছিনতাই করে মুরগি, মাছ,সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য। কেউ দেখে ফেললেও সাহস করে গাড়ি থামিয়ে মাল উদ্ধার করতে চায় না ভয়ে। ভয়ঙ্কর ওই ছিনতাইকারীদের কাছে থাকে ধারালো অস্ত্র। অনেক দিন ধরে শহরের নতুন কোট, চানমারি, রাইফেল ক্লাব মোড়ে এমন ঘটনা ঘটলেও পুলিশ বলছে, এ সম্বন্ধে তাদের জানা নেই। তবে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নিবেন।
সূত্র মতে, ১০ জনের বেশী একটি ছিনতাই বাহিনী রয়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরে। এই বাহিনীর প্রধান বাবু নামের একজন। বাবু এর আগে শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভুইয়া সাজনুর অফিসে পিয়নের কাজ করতো বলে জানা গেছে।
৪ জুলাই রাত দেড়টা। চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবের সামনে ঢাকা থেকে আসা একটি মিনি পিকআপ শহরে প্রবেশ করছে। এরমধ্যে ৩ ছিনতাইকারী গাড়িটি দেখে দৌড় দেয়। একজন গাড়িতে উঠতে সফল হয়। সে মুহূর্তের মধ্যে গাড়ির ড্রামে থাকা প্রায় ৮ কেটি কৈ মাছ নিয়ে গেঞ্জির মধ্যে নেয়। এরপর লাফ দিয়ে নেমে দৌড়ে আজগর পেট্রোল পাম্পে গিয়ে একটি শীতল বাসের নীচে লুকিয়ে পড়ে। সংবাদচর্চার প্রতিবেদক মোবাইলে এ ছবি তুলতে সক্ষম হয়। ওই সময়ে ওই মাছ বহনকারী পিকআপটি না থেমে দ্রুত চলে যায়। তবে সেখানে উপস্থিত স্থানীয়রা মাছ চুরির বিষয়টি দেখে ফেলে। তারা গাড়ির নীচে লুকিয়ে থাকা হাবিব নামের ওই চোরকে মারধর করে। এরমধ্যে কয়েকজন বলে উঠে, এই ছেড়ে দে । ও বাবুর লোক।
ইতিমধ্যে খবর পৌছে যায় সেই বাবুর কানে। প্রায় ১০ মিনিট পর পর ৫ জনের একটি করে কিশোর দল ঘটনাস্থলে আসে হাবিবকে কে ধরেছে তা জানতে। সবশেষ বাবু নিজেও এসে সান্তনা মার্কেটের নিচে অবস্থান নেয়।
স্থানীয় ও যানবাহন চালকদের দাবি, সদর ও ফতুল্লা থানা পুলিশের সীমানা অংশ চাষাঢ়া এলাকা। তাই এখানে পুলিশ সদস্যরা তেমনভাবে অবস্থান নেয় না। এ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে বাবু বাহিনী।
বাবু ও তার বাহিনীকে চেনেন এমন কয়েকজন জানান, ওরা খুব ভয়ঙ্কর। ওদের কাজে বাধা দিলে ওরা ১০/১৫ জনের দল চাকু-ব্লেড দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। ওরা অনেক দিন ধরে চাষাঢ়া ছিনতাই চক্র নিয়ন্ত্রন করে।
চাষাঢ়া এলকার কয়েকজন দোকানী জানায়, ছিনতাই বাহিনীর অনেকে দিনে টোকাই সেজে থাকে। ডেন্ডি মাদক সেবন করে আর রাতে এরা চুরি, ছিনতাই করে। সূত্র মতে, চুরি করা মাছ, মুুরগিসহ অন্যান্য মালামাল চাষাঢ়া-গলাচিপাসহ বিভিন্ন খাবার হোটেলে বিক্রি করে। হোটেল মালিকরা তা কম দামে পেয়ে লুফে নেয়। ছিনতাই করা মাল বিক্রির পর অর্ধেক পায় বাবু বাকী অর্ধেক যারা ছিনতাই করেছে তারা। সূত্র আরও জানায়, এক সময়ে সাজনুর অফিসের পিয়ন বাবুর আড্ডা এখন শহরের ভাঙ্গারী দোকানগুলোতে। চাঁনমারি ও গলাচিপা এলাকার ভাঙ্গারী দোকানে বসে চোর ও ছিনতাইকারীদের কমান্ড করে বাবু।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। আমার এ বিষয়ে অবশ্যই নজরদারি করবো।
একই রকম কথা বলেন ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) আসলাম হোসেন। তিনি বলেন, আগে জানা ছিলোনা এখন জানলাম। এই বাহিনীকে আর কোন অপকর্ম করতে দেব না। শীঘ্রই পুলিশ এদের হাতে-নাতে গ্রেফতার করবে।